চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে চলাচল করবে দুই জোড়া ট্রেন। একটি ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’ অপরটি ‘সৈকত এক্সপ্রেস’। ৪ ক্যাটাগরি টিকিটে ভাড়া সর্বোচ্চ ৩৪০ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১৮৫ টাকা। এরই মধ্যে টিকিট বিক্রিও শুরু হয়েছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে স্থায়ী ট্রেন পেয়ে দারুণ খুশি যাত্রীরা। আর স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে; এই রুটে যাত্রী চাহিদা তুঙ্গে।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারি মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন দুই জোড়া ট্রেন যাত্রী পরিবহন শুরু করবে। নিয়ম অনুযায়ী ১০ দিন আগে থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। যদিও বুধবার (২২ জানুয়ারি) থেকে বিক্রি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তা হয়নি। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর টিকিট বিক্রি শুরু হয়। অনলাইন এবং রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি টিকিট বিক্রি শেষও হয়েছে।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথ; ২০২৩ সালের নভেম্বরে এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। প্রথমে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত দুটি ট্রেন চলাচল শুরু করে। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে একটি স্পেশাল ট্রেন চললেও নিয়মিত ট্রেনের দাবিতে সরব ছিল এই রুটের যাত্রীরা।
অবশেষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের যাত্রীরা পাচ্ছেন নিয়মিত দুই জোড়া ট্রেন। পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেস এ দুটি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করবে। এরই মধ্যে স্টেশনগুলো হচ্ছে টিকিট বিক্রিও। প্রতিদিনই কাউন্টার গিয়ে টিকি সংগ্রহ করছেন এ রুটের যাত্রীরা। আর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত ট্রেন চলাচলের দাবি বাস্তবায়ন হওয়ায় খুশি এ অ লের মানুষজন।
কক্সবাজারের লিংক রোড এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ বলেন, পরিবারের ৮ সদস্যকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাব। তাই ট্রেনের টিকিট করতে আইকনিক রেল স্টেশনের কাউন্টারে এসেছি। এখন প্রবাল এক্সপ্রেসে ৮টি টিকিট নিয়েছে। টিকিট হাতে পেয়ে খুবই ভাল লাগছে, কারণ প্রথমবারের মতো ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাব।
শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা হুমায়ুন রশীদ বলেন, চট্টগ্রাম থেকে স্পেশাল ট্রেনের টিকিট পেতাম না। এখন দুই জোড়া ট্রেন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে দিয়েছে। এতে খুবই ভালো হয়েছে, এখন সবসময় ট্রেনের টিকিট পাব আশা করছি।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেনে করে যেতে লাগবে সর্বনি¤œ ১৮৫ টাকা আর সর্বোচ্চ ৩৪০ টাকা। গত ২০ জানুয়ারি রেলওয়ের পূর্বা লের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা কামাল আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ট্রেন দুটি চলাচলের বিষয়টি জানিয়ে পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি ট্রেনে ৭৪৩টি আসন থাকবে এবং ১৬টি কোচ নিয়ে চলাচল করবে।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের মাস্টার মেহেদী হাসান বলেন, নতুন রেলপথ চালুর পর ঢাকা থেকে দুই জোড়া স্থায়ী ট্রেন চললেও চট্টগ্রাম থেকে চলাচল করা ট্রেনটি ছিল অস্থায়ী। স্থানীয়দের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন উভয়পথে চালানো হবে। ১ ফেব্রæয়ারি থেকে যাত্রী পরিবহন করবে দুটি ট্রেন।
সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের সময় সূচি
সৈকত এক্সপ্রেস প্রতিদিন ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছাড়বে এবং সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। আর প্রবাল এক্সপ্রেস কক্সবাজার থেকে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে। চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর প্রবাল এক্সপ্রেস আবার বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছাড়বে এবং সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার পৌঁছাবে। সৈকত এক্সপ্রেস কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা ৮টা ১৫ মিনিটে রওনা দিয়ে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে।
তবে, সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
যেসব স্টেশনে সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেস থামবে
সৈকত এক্সপ্রেস ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামবে।
অন্যদিকে প্রবাল এক্সপ্রেস থামবে ষোলশহর, গোমদÐী, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ ও রামু স্টেশনে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রীবাহি ট্রেনের পাশাপাশি চালু করার দরকার পণ্যবাহি ট্রেনও।
কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে নিয়মিত ট্রেনের। অবশেষে এ অ লের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে। এটা শুধু পর্যটনের খাতে নয়; এই রুটে দুই জোড়া ট্রেনের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। একই সঙ্গে অনুরোধ করছি, এই রুটে যেন পণ্যবাহি ট্রেনও দেয়া হয়।
রেলওয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার নতুন রেলপথটি ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে উদ্বোধন করা হয়।
পাঠকের মতামত